স্বপ্নে যে মেয়েটিকে দেখেছিলাম লাইটহাউসের দিকে চলে যেতে ঘুম থেকে উঠে তাকে অনেকটা নীল মনে হল। ... ...
আলমারিটা তোলার সময় সেরকম কোন তোড়ফোঁড় হয়নি। কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে নামানোর সময় আলমারির ধাক্কায় একতলার একটা দেওয়ালের গা থেকে কিছুটা সিমেন্টের চটা উঠে গেছিল। তবে ঠিক সেদিন ফাটলটা অবধেশদের চোখে পড়েনি। চোখে পড়লে দুচারটে খিস্তি অবশ্যই দিত মজুরগুলোকে। আগে খুব মুখ খারাপ করত অবধেশ। এখন ছেলে বড় হতে গালি দেবার অভ্যেসটা খানিক কমিয়েছে। ... ...
কোকিলের মতো ডেকে উঠল পিনাকীবাবুর মোবাইল ফোন। এসএমএস এলে এমন ধ্বনি বাজে। উনি জানেন এই এসএমএসে কি লেখা আছে। ‘পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসুন। গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান।’ প্রতিদিন সন্ধেবেলা এই এসএমএসটা ঢোকে। আর এগুলো পড়েই পিনাকীবাবু কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না। ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন দীপা, মানে পিনাকীবাবুর স্ত্রী। বললেন, ‘তাহলে আমার মডিউলার কিচেনটা আর হল না, তাই তো? ভাগ্য করে এমন এক আধপাগলার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিল আমার বাবা। তুমি মোবাইল চালাও নাকি মোবাইলটা তোমাকে চালায়? অদ্ভুত মানুষ বটে।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ঘরে ফিরে গেলেন দীপা। রাত্রিবেলার খাবারদাবারের যোগাড়যন্ত্র করতে হবে এবারে। ... ...
বন্ধুরা অনেকেই ভালো নেই। কারও কাজের সমস্যা তো কারও পরিবারের সদস্যের প্রয়াণ, কারও জটিল অফিস বা বাড়ির রাজনীতি-তবু এসবের মধ্যেও পুজো আসে। এখনও। এও কি এক রকম বিস্ময় না? যখন জীবনটা এখানেই শেষ ভেবে নিয়েছে অনেকে, তখনই অজানা সুন্দরের ডাক এসে জানায়, এখনও প্রেম আছে। শড়িপরা মেয়েটিকে দেখে ভালোলাগছে আবার..সে যখন কাফেতে চোখে চোখে যা বলার বলে মিলিয়ে গেল, বুকের ধুকপুক জানালো, পুজো আসছে..যখন আবার পাহাড়ের কুলকুল ঝর্ণাডাক এসে জানাচ্ছে, অনেকদিন কাজের চাপে কোথাও যাওয়া হয়নি এবার কিন্তু দুম করে কোথাও বেরিয়ে পড়তেই হবে..কাউকে না পেলে একাই রাক্স্যাক নিয়ে পাহাড়ে ক দিন বেরিয়ে পড়ার সাহস জানালো, পুজো আসছে, পুজো আসছে, বয়স হলেও পুজো আসেই। ... ...
"ওই দ্যাখ, খাল পরিষ্কার করার একটা লোক পাঁকে পড়ে আর উঠতে পারছে না," কে যেন চিৎকার করে উঠল। সদ্য ঘুম ভাঙা মুখগুলো অমনি একসঙ্গে ঘুরে গেল কাদাজলে ভরা খালটার দিকে। দু'দিন তুমুল বৃষ্টির পর যেটা কানায় কানায় ভরা আর ময়রার দোকানে সদ্য তৈরি গরম রাবড়ির ট্রে-র ওপর থেকে ওঠা অল্প সাদা ধোঁয়ার মতো যার পুরোটা জুড়ে উঠছে তীব্র দুর্গন্ধের ভাপ। এমনিতেই কেষ্টপুর খালের ধারের বস্তিগুলোর ঘুম ভাঙে অনেক সকালে, কল আর পায়খানার দখল নিয়ে মেয়েদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ঢালু পারে জায়গা প্রচুর, কিন্তু আব্রু নেই। তাই ওখানে কেবল বাচ্চা আর পুরুষ মানুষের ভিড়। ঝগড়াঝাঁটি ক্যালোর ব্যালোর লেগেই আছে। তার ওপর আবার একটা জলজ্যান্ত মানুষ খালে নেমে দ্রুত পাঁকে ডুবে যাচ্ছে, এই নতুন উত্তেজনায় গোটা বস্তি ভেঙে পড়ল খালের ধারে। কারও হাতে নিমডালের আধ খাওয়া দাঁতন, কেউ সেফটিপিন আটকান ব্লাউজের ফাঁকে ঝুলে পড়া মাই চোষা বাচ্চা কোলে করে দাঁড়িয়ে আছে, সোমত্ত মেয়েরা নজর আটকাবে বলে ব্রা হীন নাইটির বুকের ওপর আলগোছে গামছা ফেলে রেখে ঝুঁকে পড়ে ডুবন্ত লোকটাকে দেখার চেষ্টা করছে। এর মধ্যেই আবার ঘরের খেয়ে বনের মোষ-চরানেরা দৌড়ে গেল পুজো প্যান্ডালের পাশে রাস্তা আটকে ফেলে রাখা লম্বা বাঁশ আনতে। ... ...